আজ সোমবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিচার চাই! “আর কোন নারী যেন বিদেশ না যায়”

অপরাধ প্রতিবেদক

চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইয়ের পতিতা পল্লিতে বিক্রি করে ১ বছর আটকে রাখা হয় এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্যাতিত এক নারী। দেশে ফিরে দালাল চক্রের সদস্যদের বিচার এবং কোন নারীকে বিদেশের কাজে না যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের আলামিন নগর এলাকায় মৃত রমজান আলীর মেয়ে (ছদ্মনাম) রুমা আক্তারকে দুবাইয়ে নিয়ে চাকুরির প্রলভন দেখিয়ে সেখানে নিযুক্ত দালাল হারুনের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় দুবাইয়ে। ১ বছর সেখানে থাকার পর দেশে এসে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে এই নারী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলামিন নগর এলাকার রেশমা বেগম (৩০), হাজেরা বেগম (৩৫) ও শহিদুল্লা মিয়া (৪৮) এদেরকে গত ১ বছর পূর্বে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই পাঠিয়ে একজন দালালের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে এই নারী পতিতা পল্লিতে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর দুবাই পুলিশের সহযোগিতায় ৭ ফ্রেব্রুয়ারী দেশে আসে। আসার পর প্রতারক চক্রের সদস্যে হাজেরা বেগম ও শহিদুল্লাহ মিয়ার কাছে দুবাই পাঠাতে নেয়া ১ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে তারা নির্যাতিতা নারীকে হত্যার হুমকি প্রদান করে।

নির্যাতিত এই নারী দৈনিক সংবাদচর্চার কার্যালয়ে এসে বলেন, রেশমা আমার এলাকার পাশের বাসায় থাকে। সে আমাকে বলে তুমি গার্মেন্টস কম টাকা বেতনে চাকুরি করে কি করবে? আমি তোমাকে বিদেশ পাঠিয়ে একটি আরবীর বাসায় কাজ নিয়ে দেই। তখন সে ও আর তার স্বামী আলমগীর মিলে আমার পাসপোর্ট ও ভিসা বের করে আমাকে বিমান বন্দরে নিয়ে এগিয়ে দেয়। আমি দুবাই যাওয়ার পর দুবাইয়ের বিমান বন্দরে গিয়ে জানতে পারি, আমাকে ৩ মাসের ভিসা প্রদান করা হয়েছে।

সেখানে আমাকে নিতে আসে একজন দালাল তার নাম হারুন। আমি তার কাছে কাজের কথা জানতে চাইলে সে বলে তোমাকে রেশমা আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করার পর তুমি যেতে পারবে। সে আমাকে ১ মাস একটি রুমে আটকে রাখে। সেখানে শুধু মাত্র ফল খেতে দেয় আমাকে। কয়েক দিন পর দালাল আমাকে মারধর করে। এবং পরবর্তীতে আমাকে বিভিন্ন খদ্দরের কাছে আরেকটি পতিতা পল্লিতে কয়েকদফা বিক্রি করে দেয়। সেখানে আমাদের অনেক অত্যাচার করতো এবং খারাপ কাজ করার জন্য বাধ্য করতো খদ্দরের কাছে। আর কেউ যদি খারাপ কাজ না করতো তাকে ৫ দিন খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে একটি রুমে আটকে রাখতো। আর এই জায়গায় আমরা অনেকজন বাংলাদেশী মেয়ে ছিলাম তারা সকলেই প্রতারিত হয়ে এখানে এসেছে আমার মতো। আমাদেরকে ভারত, পাকিস্তান ও আরবের খদ্দরদের সাথে খারাপ কাজ করাতো। খাবারের জন্য বাধ্য করে সকলকে এ কাজ করাতো এই দালাল চক্রের সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পথে বিমানে একজন ব্যাক্তি দুবাইয়ের একজন সিআইডির ফোন নাম্বার প্রদান করে আমাকে। আমি সেই নাম্বারে ফোন করার পর পুলিশের সহায়তা নিয়ে ৯ জন মেয়েসহ আমাদেরকে পতিতা পল্লি থেকে আটক করে দুবাই পুলিশ। পরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়ে আমারা দেশে ফিরেছি। আমি এই প্রতারক চক্রের বিচার চাই যাতে করে আর কোন নারী বিদেশে গিয়ে পতিতা পল্লিতে বিক্রি না হয় এবং প্রতারিত না হয়। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করবো কোন নারী যাতে বিদেশে কাজে না যায়। আর রেশমাসহ দেশে ও বিদেশের দালাল চক্রের সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই সরকারের কাছে।

নির্যাতিতার মা বলেন, কাজের কথা বলে আমার মেয়েকে বিদেশ নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আমার মেয়ে এখন অনেক অসুস্থ। আর দেশে থাকা দালালরা আমাদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে আমরা যাতে মামলা না করি। এছাড়া এলাকার স্থানীয় নেতারা বেশ কয়েকবার শালিস করার কথা বলে আমাদেরকে প্রতারিত করেছে। প্রতারকদের দ্রুত গ্রেফতার ও ন্যায় বিচার চাই।

এ ব্যাপারে ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন বলেন, থানায় মামলার দায়ের করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করব যাতে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। এছাড়া নির্যাতিত নারীসহ তার পরিবারেরকে কেউ যদি হুমকি প্রদান করে তাহলে স্থানীয় এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আমরা তা দমন করবো।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত প্রদান ব্যাক্তি রেশমা বর্তমানে দেশের বাহিরে আছে। দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর দেশে যারা আছে তাদের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাশ চন্দ সাহা মুঠো ফোনে দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ঘটনাটি জানার পর মনে হল মরমান্তিক। তবে এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিতর মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ